শাহারুল ইসলাম ফারদিন, যশোর প্রতিনিধিঃ করোনা আতঙ্কের কারণে বিশ্ব স্থবির হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে উন্নত দেশগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থাও। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বাংলাদেশেও প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। যদিও আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার কম। এরপরও দেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। দেশের চিকিৎসক ও ঔষুধ ব্যাবসায়ীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ রোগে আক্রান্ত রোগীরা। অনেকেই নামিদামি ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। তখন একমাত্র ভরসা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ও ফার্মেসি গুলি।
বড্ড বেকায়দায় পড়েছে সর্দি, কাশি, হাঁচি আর এ্যাজমার ও সাধারন রোগীরা। এখন মওসুম বদলের সময় এসব এসময় প্রতিবছরই দেখা যায়। এসব উপসর্গ কারোনা ভাইরাসের সাথে মিল থাকায় এখন যাদের এসব অসুখ আছে তারা চিকিৎসা নিয়ে বেশ বেকায়দায়। অন্য অসুখের রোগীরাও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। নগর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সর্বত্র ফাঁকা। কারন চিকিৎসা সেবা নেই। প্রায় অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিকও বন্ধ। ডাক্তারদের প্রাইভেট চিকিৎসা নেই। এখন অসুস্থ রোগীরা যাবে কোথায়?
যশোর সদর হাসপাতালের আউটডোর ইনডোর ঘুরে দেখা যায় রোগীর সংখ্যা অনেক কম। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রোগীরা হাসপাতালে আসতে পারছেনা। আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা তেমন নেই। এখন তাদের ভরসা গ্রাম্য ডাক্তার ও ফার্মেসি গুলি, আর মুদি দোকানের ঔষধ বিক্রেতা। রোগী নিজে নিজেই ডাক্তার হয়ে গেছে। ঔষুধের দোকান ছাড়া সব বন্ধ। এখন এসব ঔষধের দোকানদার ডাক্তারের ভূমিকায়। নগরীর বেশকটি ঔষধের দোকান পর্যবেক্ষন কে দেখা যায় অনেকেই রোগের কথা জানিয়ে ঔষধ নিচ্ছে। বেশী বিক্রি হচ্ছে প্যারাসিটামল, সর্দির জন্য এলাকট্রল, ডেসলার, হিসটাসিন জাতীয় ঔষধ। গ্যাসের ট্যাবলেট আর কাশীর সিরাপ দেয়া হচ্ছে। পেটের পীড়ার জন্য ইমোটিল, ফ্লাজিল বিক্রি হচ্ছে। এ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হচ্ছে বেশ। আবার কেউ কেউ এসেছেন পরিচিত ডাক্তারের কাছে রোগীর উপসর্গ বলে তা লিখে এনে ঔষুধ নিচ্ছেন। পাড়ার কোন কোন মুদি দোকানেও মিলছে কিছু কিছু ঔষধ। যার যার সমস্যার কথা বলে নিচ্ছে ঔষুধ।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এমনকি দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ চরম হিমশিম খাচ্ছে। দেশের এই বিপদের সময় যেখানে এমবিবিএস ডাক্তাররা মানুষের সেবা দিবেন, সেখানে এমবিবিএস ডাক্তাররা তাদের নিরাপত্তা ও ভয়ে অনেকেই নানান অজুহাতে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। একমাত্র গ্রাম ডাক্তার ও ফার্মেসি গুলি নিজেদের ঝুঁকি নিয়েই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের খানপাড়া গ্রামের মৌলভী মৃত আব্দুল খালেক খানের ছোট ছেলে শিহাব উদ্দিন খাঁন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের বাবুর ঠান্ডা-কাঁশি। আসছিলাম শিশু ডাক্তার দেখাইতে, ভাবিকে নিয়ে দুইদিন আইসা ফিররা গেছি। পরে বাড়ির পাশে আমাগো কাকারে (গ্রাম ডাক্তার) দেখাইছি। এখন বাবু ভাল হইয়া গেছে’। এদিকে, স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা যশোর সদরের খালধার রোড এলকার বস আলতাফ হোসেনের বড় ছেলে এমডি আলি হোসেন বলেন, আমি বাসা থেকে বের হয়েছি, কোন রিকশা নেই। আমার বাড়ির পাশের রিকশাওয়ালাকে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধা ও রিকশার চাবি নিয়ে যায়। তারপর দীর্ঘ ১ ঘণ্টার রোদ্রে রোগী নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই। গিয়ে কোনো ডাক্তার পাই নাই। পরে রোগী ক্রমান্বয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়েই গেলাম পরিচিত পল্লী চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নেই’।
এ ব্যাপারে যশোর শংকরপুর গোলপাতা মসজিদের সামনে গাজী মেডিসিন শপ এর মালিক গাজী রাশেদ রায়হানের সাথে কথা বলে জানা গেল তিনি বলেন ‘আমার একটি জীবনের বিনিময়ে যদি এদেশের হাজারো মানুষের জীবন বেঁচে যায় তাহলে আমি হাজারো মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবো। আমি মনে করি একজন আদর্শবান ডাক্তার কখনও তার সেবা থেকে সরে থাকতে পারে না, আমি দেশবাসী সকলের কাছে দোয়া চাই, যেন আপনাদের সকলের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি যেকোনো মহামারী ও দুর্যোগ মোকাবেলায় আপনাদের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।’